সাতার শেখার প্রয়োজনীয়তা

31
0

আজ বহুদিন হলো কলেজে যাওয়া হয় না। হবেই বা কি করে দেশে যে আন্দোলন চলছে। আমার না একটু চুপচাপ থাকা পছন্দ কম, এটা হয়তো আমার রক্তের মধ্যে। একটু জাকজমক পরিবেশই তো আমার কাছে বেস্ট মনে হয়। আপাতত এইটা নাই, যা আমাকে একটু প্যাড়া দিচ্ছে। কিন্তু একটা ব্যপার খুবই ভাবনার, বাংলাদেশের ছেলেদের এতো সাহস আসে কোথা থেকে। বাংলাদেশের মাটিতেই মনে হয় কিছু একটা আছে। আবার অনেক ফেমিনিস্ট আমাকে জেরা করতে পারে, শুধু সাহস কি ছেলেদের মেয়েদের নাই? আমার মতে মেয়েরা সব সময়ই সাহসী, আমি কোনো ভীতু মেয়ে দেখেছি বলে মনে হয় না। হ্যাঁ একটা বয়সে হয়ত তারা ভীতু থাকতে পারে, কিন্তু মা হওয়ার প্রক্রিয়ায় সে অশেষ সাহসীকতার অধিকারী হয়ে যায়।

ক্যাম্পাস আজ গরম, আন্দোলনকারীদের উপর হামলা হয়েছে। হামলাকারীদের প্রসংঙ্গে যাওয়া অনর্থক। কিন্তু তাদের মধ্যে যে মনুষ্যত্ব নামক জিনিসটা নেই সেটা নিয়ে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ নাই। মেয়েদেরকেও রেহাই দেয় নাই তারা। রাহাত, তানজিম, ঐশী, নিবির ওদের খবর পাইছি যে ভালোমতো লাগছে ওদের। এইবার বসে থাকা তো যাচ্ছে না। এখন নিজেদের ক্যাম্পাসে কি মার খেতে হবে নাকি? কালকে মিছিল হবে খোঁজ পেলাম, লোকজনও কয়েকজন জুটিয়ে ফেললাম। সকাল সকাল আশিক আর আমি বের হয়ে পড়লাম, উদ্দেশ্য টিএসসি। আজকে চোখে লাগার মতো লোক হয়েছে বলা যায়। আগেই বলেছিলাম বাংলার মাটিতে কিছু একটা আছে যতজনকে মারবা তার থেকে দশগুন মানুষ গুলির সামনে দাঁড়ায় যাবে। প্রতিটা স্লোগান গায়ে কাটা দিচ্ছে, “রাষ্ট্রভাষা বাঙলা চাই”, দাবি এটাই। হটাৎ দেখলাম একদল মানুষ আসলো, এদের মানুষ বলবো নাকি নেশাখোর বলবো তা নিয়ে একটু সন্দেহ আছে। তবে তারা যে রাস্তার পাশে বসে গঞ্জিকা সেবন করে তা নিয়ে সন্দেহ নাই। তাদের সবার হাতে আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য ধারালো অস্ত্র। সামনে থেকে যারা নির্দেশনা দিচ্ছে তাদের চিনি, তারা আমাদেরই সহপাঠী, ভাই, বন্ধু, হলের প্রতিবেশী। ওরা কি আমাদের মারতে চায়? ওরা তো আমাদেরই মতো, ওরা কেন মারতে চায় আমাদের? আমাদের মারলে কি ওরা অনেক লাভবান হবে? জানি না এমন অনেক কিছুই ঘুরপাক খাচ্ছে এখন। তবে এখন আমাদের দৌড়ানোই শ্রেয়। দৌড়ানোর সময় খেয়াল করলাম, আমাদের সুযোগ্য বাহিনী যারা আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে, তারা তাদের দায়িত্ব খুবই নিষ্ঠার সাথে পালন করছে। তারা দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করছে কখন তাদের প্রতিহত করতে নামা উচিত। আমি তাদের এই অবদানকে বিনম্র শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করিবো আজীবন। যাইহোক কোনোমতে এই যাত্রায় বেচে গেলাম, নেহাৎ অনেক হয়েছে আমি আর কোনো প্রতিবাদের মধ্যে নাই। আমার প্রচুর শিক্ষা হয়েছে, তবে আশিক কই? এটা তো একটা কোটি টাকার প্রশ্ন। ফোন দিলাম নাই, আশেপাশে যাকে ফোন দেই সেই বলে জানে না। আস্তে ধীরে সামনে যেয়ে দেখা উচিত আছে কি নাই। যাক অবশেষে পেয়েছি রাস্তার মধ্যে শুয়ে আছে। একটা মানুষ কত বড় বজ্জাত হলে ফোন না ধরে রাস্তার মধ্যে শুয়ে থাকে। এখন যেই ঘুম দিছে এই ঘুম থেকে তো উঠবে না, তাই অগত্যা পিঠে করে একটা সিএনজি করে নিয়ে গেলাম হাসপাতালে। কাগজপত্র দিলো, এম্বুলেন্সে করে নিয়ে গেলাম গ্রামের বাড়ি। সবই ঠিক আছে শুধু ওর মাকেই কিছু বোঝানো যাচ্ছে না, ওর মা আমার কাছে জবাব চাচ্ছে। আমি কি জবাব দিবো? হ্যাঁ, আপনার ছেলে স্বাধীন দেশে থেকে প্রশ্ন তুললে তাকে মারা যেতেই পারে। আপনার ছেলের উপলব্ধি করা উচিত ছিল, যে প্রশ্ন করার দরকার কি। একটা বোকা ছেলেকে নাকি সবাই আবার শহীদ বলছে। এই ছেলে নাকি সবার সামনে হাত মেলায় দাঁড়ায় ছিল, তাকে যেন মারে। কোনো ভয়ও কি নাই ওর মধ্যে, বোকার রাজা। বোকারা বেচে থেকে কি করবে, ঠিকই আছে মরছে। ওর কি দরকার ছিল সবার অধিকারের জন্য নিজে গুলি খাওয়া, যত্তসব আজাইরা কাজকারবার। মানুষের কাজকর্ম দেখলে সত্যিই হাসি পায়, যে তার মাকে কাদায় সে কিভাবে শহীদের মর্যাদা পায়।

হলে এসে বুঝতে পারলাম, সবার রক্ত একটু বেশি গরম। কালকে নাকি ওরা সর্বাত্মক আন্দোলনে নামবে। আমার নামার ইচ্ছা খুব একটা বেশি নাই, তবে যদি না নামি আমাকে মনে হয় ওরা হলদ্রোহী ঘোষণা করে দিবে। আজকেও নামলাম, আভাস আগে থেকেই পেয়েছি যে আজকেও হামলা হবে। তাই মনে মনে ফন্দি ঠিক করতেছিলাম কিভাবে কেটে পড়া যায়। ভাইরে ভাই কেটে পড়ার সময়টুকুও দিলো না। এখন বেচে থাকার একমাত্র উপায়, উলটা ঘুরো আর সোজা দৌড় দেও। কিন্তু উলটা দিকে যারা দৌড় দিছে তারা আবার ফেরত কেন আসতেছে তাতো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। অতপর বুঝতে পারলাম, আমাদের সুপ্ত বাহিনী জাগ্রত হয়েছে। তারা পিছন দিক থেকে রাবার বুলেট ছুড়ছে। সবাই দেখি পাশের লেকে ঝাপ দিচ্ছে। কিন্তু আমি হাত উচু করে দাড়ায় থেকে নিজের জীবনকে দুষছি, কেন এত সমীকরণ শিখতে পারলাম আর সাতারটা শিখতে পারলাম না। যাক এখন একটা বুলেট এসে লাগছে, রাবার বুলেট তো শরীরে ঢুকে যায়নি, তবে ব্যথা করে শ্বাস আটকায় আসছে। একটাতে মনে হয় মন ভরে নাই গুনে গুনে এগারোটা লাগলো। এখন না আমি কোথায় আছি তা বুঝে উঠতে পারছি না। আমি কি পানির অতল গভীরে শরীরের সাথে সন্ধি করছি নাকি অসীম আকাশে ভেসে আছি আর কোনো এক সত্তার সাথে সাথে সন্ধি করছি…….

এই গল্প শুধু সাতার শেখায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য লেখা হয়েছে, কোনো ঘটনা কেন্দ্রীক না। অনুগ্রহ করে স্লোগানের বদল করবেন না কেও। স্লোগানের বদল করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

প্রহসন……………..?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *