শ্রাবণ স্মৃতি

30
0

শ্রাবণ রাত্রি। উত্তাল বাতাসে ভর করে মাতাল করা ফুলের বুনো গন্ধ ভেসে আসছে। আকাশের চাঁদ আজ পরাজিত ওই কালিমালিপ্ত মেঘের পুরু দেয়ালের বিপরীতে। আঁধারের চাদরে চুপটি করে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে কদম্ব বৃক্ষগুলো। মাঝে মাঝে স্বর্গ মর্ত্যের ব্যবধান ঘুচিয়ে গগন চিড়ে উন্মত্ত সর্পের মত বিপুল আক্রোশে ছুটে আসছে বিদ্যুৎপ্রভা। বজ্রযানের বজ্রাসনে চেপে বজ্রনাদ করে ধরনী ছোঁয়ার চেষ্টা করছেন বজ্রধর। প্রবল বায়ুর আস্ফালনে গাছের পাতার ঘর্ষণের শব্দ তীব্রভাবে ছড়িয়ে পরছে চারদিকে।

দুচালা বাড়ি। পুরো বাড়ি নিশ্চুপ। চিলেকোঠার ঘরে একটা লন্ঠন টিমটিম করে জ্বলছে যেন বাড়িতে প্রাণের অস্তিত্ব প্রমাণ করছে। জানালার কপাট ক্ষিপ্তভাবে আঘাত হানছে মুহুর্মুহু পাগলা হাওয়ার কারনে। একটা অবয়ব এসে দাঁড়ায় জানালার কাছে। বায়ুবেগ হঠাত বেড়ে যায় যেন। বিদ্যুৎ চমকাল। আলোয় দেখা গেল অবয়বটাকে। এক নারীমূর্তি। চুলগুলো উড়ছে। বৃষ্টির ঝাপটা এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে রমনীকে। বেলী ফুলের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আশেপাশে তো বেলীফুলের কোন গাছ নেই! আবার বিদ্যুৎ চমকাল। দেখলাম রমনীর হাতে কয়েকটা ফুল। রমনীকে এবার কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে।

তীব্র আলোর ঝলকানি….

আরেকটা বৃষ্টিভেজা রাত। একটা মোমবাতি জ্বলছে। দুটি অবয়ব। অনেক কাছাকাছি। চারটে হাত এসে স্থির এক বিন্দুতে। দুজন তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। মেয়েটা আস্তে করে ডাকল, “আকাশ!”

আরেকটু কাছে এগিয়ে আসল আকাশ। মেয়েটার কানের কাছে মুখ নামিয়ে বলল, “ভালবাসি অনন্যা।”

বিদ্যুৎ চমকে উঠল বাইলে। খোলা জানালা দিয়ে আসা আলোয় আকাশ এক মূহুর্ত দেখলো অনন্যাকে। চোখ বুজে আছে মেয়েটা। বাহুবন্ধন দৃঢ় হচ্ছে। আকাশের বুকে মাথা রেখে যেন ওর হৃৎকম্পন শুনতে চাইছে অনন্যা। কয়েক সেকেন্ড চলে গেল। নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পকেট থেকে বেলীফুলের ছোট একটা মালা বের করল আকাশ। চুলে বেঁধে দিল অনন্যার। অনন্যার প্রিয় ফুল।

বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ ভেসে আসছে। তার সাথে বেলীফুলের গন্ধ মিশে গিয়ে এ যেন এক অপার্থিব পরিবেশ।আবার বিদ্যুৎ চমকাল। অনন্যার মুখে মৃদু হাসি। চোখে জল। হাত দিয়ে জল মুছে দিল আকাশ। শক্ত আলিঙ্গনে আটকে রেখে মুখটা নামিয়ে আনল অনন্যার কাছে, কামনা নিয়ে। অনন্যা এগিয়ে আসলো। খাটের পাশে রাখা মোমবাতিটি হাতের ধাক্কায় পরে গিয়ে নিভে গেল। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই আজ কারও। বেলীফুলের গন্ধ বেড়ে চলেছে। আদিম প্রকৃতিতে মানব মানবী খুঁজে নিচ্ছে পরস্পরকে।

বিদ্যুৎ চমকে উঠল। জানালার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা রমনীকে চিনতে পেরেছি। অনন্যা। গাল বেয়ে তরল দুঃখগুলো গড়িয়ে পড়ছে মেঝেতে। খোলা চুলগুলো উড়ছে। দূরে পুকুর পাড়ে তাকিয়ে আছে ও। ওদিকে তাকিয়ে কেন ও? আরে ওখানে তো আমার আশ্রয়। একটা সমাধি আছে ওদিকে। নামফলকে লেখা “আকাশ ব্যানার্জী”।

-রয়

২৭ সেপ্টেম্বর,২০১৫

Roy
WRITTEN BY

Roy

মধ্যরাতের আগন্তুক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *