যৌবন–এই সময়টা সবচেয়ে সুন্দর সময়। যত্তসব এলোমেলো চিন্তা, ভালো লাগা, নতুন নতুন অদ্ভুৎ জিনিস ট্রাই করা আরো কত কিছু। এই সময়ে কাছের বন্ধু টা সব অপকর্মের সাক্ষী হয়ে থাকে আর পকেটে টাকা আসলে ওদের ট্রিট দিতে দিতে পকেট ফাকা করে ফেলতে হয়। মাস শেষে কিন্তু আবার ঐ বান্দরের কাছেই পাওয়া যায় ধার।
একসময় টাকা গুলো আর ওদের জন্য খরচ হয় না। খরচ হয় যৌবনের তাড়নায় চোখে ধাধা লাগানো প্রেমের পিছনে। তাকে নিয়ে মেলায় যাওয়া,মুভি দেখা,শপিং এ যাওয়া। রাত ভোর কথা বলতে বলতে জলে চোখ টলমল করে ওঠা,কখনো ভয় পাওয়া কখনো বা তীব্র এক ভালোবাসা মাখানো সুখের ছবি কল্পনা করা।
একটা সময় সবকিছুতে বিরক্ত লেগে ওঠে। ভালবাসা মাখানো শব্দ গুলো আর মনে আলোড়ন সৃষ্টি করেনা অথচ যেগুলো একসময় বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন মনে হতো। সবকিছু কেমন যেন স্তব্ধতায় ডুবে থাকে। বুকের ভেতর হাহাকার করা কান্না টাকে মনে হয় এক একটা অভিশপ্ত শব্দ।
যৌবন তো আর প্রেমিকার মায়া ভরা চোখ দেখে কাটিয়ে দিবো না!! মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হতেও তো শক্ত পোক্ত মাটি দরকার। ছুটে চলতে হয় অবিরাম চাকরির খোঁজে। সময়টা তখন ভাগাভাগি হয় ক্লান্ত শ্রান্ত শরীর আর মনের সাথে। শরীর ক্লান্ত থাকলেও মনটাকে শেখাতে হবে ক্লান্তিহীন হতে। ।
একসময় কাজ করতে করতে ললাট কে মেনে নিতে হয়- এইতো জীবন চলছে জীবনের গতিতে আর ভারাক্রান্ত ক্লান্তি বিদ্যমান অবিরাম
এইবার একটু সতেজতা দরকার। মাটিতো শক্ত হলো – এইবার একটু আয়নায় স্বীয় দর্শন করার পালা। বয়স টা ৩৫ লাগছে না তো,,কেবল তো ২৯ এ পারা দিলাম। প্রেমিকা তো অনেক অপেক্ষা করেছে- এবার গাট বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চুল দাঁড়ি পাকানোর পালা। কিজানি কেমন হয় বাকিটা পথ!!!
অতশত ব্যস্ততার মাঝেও কোথাও না কোথাও বুকের ঠিক মাঝখানে চিনচিন করে ওঠতো প্রেয়সির মায়া মাখানো ছবি,,,কিন্ত না পেরেছি প্রেয়সিকে বোঝাতে আর না পেরেছি মন কে শান্তনা দিতে। জীবন নামক নৌকা পাড়ি দিতে দিতে কখন যে নদীপথ দিক পরিবর্তন করে ফেলেছে বুঝে ওঠা দায়! আজ আর প্রেয়সী টা নেই। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সুখে শান্তিতে ঘর করছে সে।
মেকি ধারণা নিয়ে যৌবনটা পার করে দিলাম কাজ কাজ করে – সে তো আর রইলো না। তবে জীবন কি আর থেমে থাকে!! ভালবাসা নামক মোহর টাকে সরিয়ে বাস্তবতায় নিজেকে ধরিয়ে দেয়ার পালা।
৩ মাস ২১ দিনের মাথায় মনে হলো নিজেকে বিবাহিত। এতোদিন লেগেছে কবুল পরানো বউটাকে প্রেয়সির জায়গা দিতে। ভারি মিষ্টি মেয়ে তবে একরোখা। যাক চালিয়ে নেয়া যাবে চুল দাঁড়ি পাকা পর্যন্ত। নাতি পুতির মুখ দেখেই তবে মরার ইচ্ছে।
ঘেমে টেমে টিফিন ক্যারি নিয়ে যখন অফিস থেকে বাসায় ঢুকি এই একরোখা মেয়েটা দৌড়ে এসে হাতে পানির গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে যায়। তখন মনে হয় ৩০ বছরের বুড়ো ছেলেটা বুঝি বাচ্চা হয়ে গেছে। শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখখানা মুছে দিয়ে বলে ওঠবে অনেক কষ্ট হয়েছে তোমার!
এইভাবে চলতে থাকে মধ্যবিত্ব ঘরের তনয়দের গল্প- খুব সাদামাটা জীবন। কিন্তু কোথাও কোন কমতি নেই,আছে যেমন প্রেম ভালবাসা উড়াধুরা চলাফেরায় নিজেকে সিক্ত করা ঠিক তেমনি আছে দায়িত্ব টা যৌবনে কাঁধে নিয়ে খাটিয়াতে শোয়া পর্যন্ত বহন করার সক্ষমতা