আজকে ছুটি। ভাবলাম জমিয়ে ঘুমানো যাবে। কিন্তু ৯টা বাজতেই ম্যাডাম ডাক দিলেন। আজকে নাকি সে আমার হাতের খিচুড়ি খাওয়া ছাড়া নড়বেই না। পরে তো গেছি বিশাল জ্বালায় কি বুঝে যে কালকে বাহাদুরি করে বলতে গেলাম আমি সকালে রান্না করবো। আর কিছু করার নেই। রান্না তো করতেই হবে। তাই ঘুমের জলাঞ্জলি দিয়ে রান্না করতে যেতে হলো।
রান্নাটা অবশ্য একসময় প্রায়ই করা হতো। কিন্তু এখন আলসেমি লাগে করতে সারাদিন হাসপাতালে থাকার পর। দুই ম্যাডামের খাওয়া শেষে নতুন আবদার কাচ্চি বিরিয়ানি খাবেন দুপুরে। বড় ম্যাডামকে কাটানো সম্ভব হলেও ছোট জন একেবারে অনড়। তাই কি আর করার যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। নামাজ পরে এসে, নিয়ে বের হলাম দুজনকে। ফাঁকা রাস্তা,গাড়ি চালানোর মজাই আলাদা। খাওয়া শেষ হওয়ার পরে ভাবলাম জমিয়ে ঘোরাঘুরি করা যাবে। এমনিতেই এই সুযোগটা সবসময় পাওয়া যায় না। তিশাকে নিয়ে গেলাম শিশু পার্কে তারপর ভাবলাম আগেকার মতো অনুর সাথে আর রিকশায় ঘোরা হয় না অনেকদিন। যেই ভাবা সেই কাজ। ঘন্টাখানেক ঘুরলাম। হটাৎ মনে পড়লো আজকে ঘোরাঘুরির ঠেলায় তো আমার একটা কাজ করতে তো মনেই ছিল না। ঝটপট গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম , রাস্তা ফাঁকা থাকায় দ্রুতই পৌঁছে গেলাম। বসে পড়লাম কবরের সামনে। ১০ মিনিট বসে রইলাম চুপ করে। তারপর দোয়া করলাম । আমার ম্যাডামরা যেন ভাল থাকে। কেন যে সেইদিন মজার জন্য টেস্টটা করলাম। টেস্টটা না করলে হয়তো জিনিসটা অজানাই থেকে যেত যে আমি জন্ম থেকেই বাবা হতে পারবো না, অজানাই থাকতো তিশা আমার মেয়ে না, অজানাই থাকতো অনু এত জঘন্য একটা কাজ করেছিল। এতকিছু জানার পর আমার তাদের মারা ছাড়া কোন উপায়ই ছিল না। কিবা করতাম চোখের সামনে পাপ ও পাপী উভয়কে দেখা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। যদিও পুলিশ এখনো পর্যন্ত কিছুই আঁচ করতে পারে নাই। আর পারার কথাও না। অ্যালকাইল হাইড্রোলাইসিসের মাধ্যমে পুরো লাশ দুটি তো গলানোর মাধ্যমে নদীর পানিতে মিশিয়ে দিছি।
বাসায় ফিরে আসলাম। দেখি শিহাব আসছে। এটা বড় কোনো বেপার না। আমার অনেক কাছের বন্ধু ও প্রায়ই আসে। তবে আজকের আসাটা ভিন্ন। ও আজকে গাড়ি ছাড়া পুলিশের কোন লোক ছাড়া আসলো। ওর চাহনি আজকে অনেকটা হিংস্র লাগছে। মনে প্রথমবারের মতো কিছুটা ভয় ঢুকলো। ও আমাকে ডেকে ল্যাবে নিয়ে গেল। কখনো ও ল্যাবে আসতে চায় না। আজকে ওর কি হলো যে নিজে নিজেই ল্যাবে যেতে চাচ্ছে। কে জানে পুলিশের মনে কখন কি আসে। ল্যাবের দরজা বন্ধ করে ও আমার দিকে ওর নিজের লাইসেন্স করা Glock 19 রিভলবারটা তাক করে রেখেছে। আমি জানি ও কেনো তাক করে রেখেছে, আমি যে ওর মেয়েকে খুন করেছি । ও প্রতিশোধ নিতে এসেছে। অবাক হওয়ার কিছুই নেই। তবে ও হয়তোবা আমাকে চিনতে ভুল করেছে। ও আমাকে আমার ল্যাবে কখনোই মারতে পারবে না। আমার হাতের পাশে থাকা ফ্লুরোঅ্যান্টিমনিক এসিড ওর গায়ের উপর ঢেলে দেই…………
ঘুম ভেঙ্গে গেল । পুরো শরীর ঘেমে ভিজে গেছে। শ্বাস আটকে যাচ্ছে। কি বাজে স্বপ্নই না দেখলাম। বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার শুয়ে পড়লাম একটু ঘুমানোর আশায়। না, ঘুম আর আসলো না। পাশে দেখি অনু আর তিশা গভীর ঘুমে মগ্ন। তাই ভাবলাম একটু ফেইসবুক থেকে ঘুরে আসি। স্ক্রলিং করতে করতে একটা অচেনা আইডি থেকে মেসেজ আসলো-
এতো রাতে কি করেন?
আমি বললাম ,
তা আপনাকে কেন বলবো আজব
সে বলল,
আচ্ছা বইলেন না, আপনার বউ কি ঘুম?
আমি কিছুটা বিরক্ত হয়েই বললাম,
এতো রাতে ঘুমানোরই কথা নয় কি?
সে বলল,
তো আপনার বউ কোথায়?
এবার আমি একটু না প্যাচায় সোজা উত্তর দিলাম,
আমার পাশে শুয়ে আছে, কেন বলুনতো?
সে এইবার বলল,
তুমি ফাইজলামি করতেছো নাকি?
আমার মাথা গরম হয়ে গেল। লেখে দিলাম,
এত রাতে ফাইজলামি করার শখ আমার নাই
এবং ব্লক করে দিলাম। এতো রাতে আর ভালো লাগে না। ফোন রেখে দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতেছি । ঘুম আসছে এমন সময় ফোন বেজে উঠল। আজকে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনার উপর একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোন ধরবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। অচেনা নাম্বার এত রাতে। সব আজব জিনিসপত্র হচ্ছে আমার সাথে আজকে। ফোন রিসিভ করলাম আর ওপাশের কথাগুলো কিছুটা এমন ছিল,
এই তুমি কি পাগল টাগল হয়ে গেছো নাকি আমি আর তিশা তো আমার বাসায় আসছি। তোমার পাশে তোমার কোন বউ শুয়ে আছে,শুনি? মাঝরাতে মানুষের সাথে ফাজলামি করো। আমি বাসায় এসে মজা…….
ফোনটা কেটে দিলাম এবং আমার পাশে শুয়ে থাকা অনু আর তিশার দিকে তাকিয়ে দেখি দুজনের মুখে কি অদ্ভুত রহস্যজনক হাসি মনে হচ্ছে যেন কতকালের চাওয়া পূর্ণ হলো।